03-05-2023
প্রথমেই সরি, ইহা ডিজাইন নিয়ে কোন আর্টিকেল না। যেহেতু মন থেকে লিখতে ভালো লাগে তাই সব কিছুই আমার কাছে ভাবনার খোরাক।
আমি ফেইসবুকের কাছে খুব কৃতজ্ঞ যে তারা যে কোন কিছু ওনলি মি করে রাখার পারমিশন দিয়েছে। আমি সব কিছুই ওনলি মি করে লিখে রাখি। সেটা হোক ভয়ংকর খারাপ কিংবা নতুন কিছু জানতে পারার আবেগ। তেমনি আমার বাবকে নিয়ে কিছু ত্যাক্ত, বিরক্ত আর ভালোবাসার কিছু স্ট্যাটাস খুঁজে পেয়েছি, যদিও সব দেবার মত না, ফিল্টার করে আজকে সেগুলো নিয়েে “বাবাসফি (বাবার ফিলোসফি)”
আমার বাবা আর দশজন বাবার মতই কিনা জানি না, কখন চিন্তা করা হয়নি। ওর বাবা কুল আমার বাবা না কেন কিংবা তার বাবা বড় লোক আমার বাবা না কেন। এমন টাও কখন ভাবা হয় নি।
১
অনেকদিন আগে তিনি আমাকে একটা বিসিএসের একটা গাইড নিয়ে এসে বললেন এটা দিয়ে প্রিপারেশন নাও, আমার অমুক ফ্রেন্ডের ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট, সে এটারই হেল্প নিয়েছিল। আমি সেই গাইড টা মিরপুর ১০ নম্বারের পুরাতন বইয়ের দোকানে সকাল সকাল বিক্রি করে কিছু টাকা এড করে একটা মাউস কিনে নিয়ে আসছিলাম। আজকে এসে সে বলে “আমি তোকে যে বইটা দিয়েছিলাম সেটা দে তো”, আমি বললাম আমি একজনকে দিয়েছি। তখন বলে এখনি নিয়ে আয়। আমি বইয়ের নাম ভুলে গেছিলাম। পরে নতুন একটা কিনে তাকে দিলাম। বই দেখে বলে “এটা না আমি যেটা দিছি ওটার পিছনে আমার কোম্পানির সিল মারা ছিল”। জীবনটা পুরাই লসে আছে।
২
একদিন দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে ঢুকেছি, সে আমাকে ধরে বলেছিল “বেশি স্পিডে বাইক চালাইস না, যদি ব্যালন্সে হারাস তাহলে ঐ স্পীডে ছেচরাবি”। আমি ধাঁধায় পরে গিয়ে বলেছিলাম আমি কি কিছু করছি। আজকে বাইক এক্সিডেন্ট করছি, উপপাদ্য প্রমাণিত।
৩
বাবার তখন অপারেশন হবে / আমি হসপিটাল টু অফিস, অফিস টু হসপিটালে জীবন খুঁজে নিয়েছি। তো বাবার অপারেশন হলো জুমশেপারের সবাই আমার বাবাকে দেখতে আসলো, কাওসার ভাই, আমার সব ভাই ব্রাদার (কলিগ’স)। হঠাত করে বাবা, কাওসার ভাইকে (আমার সিইও) বলে “রাজিন কাজ কিছু পারে, নাকি এমনি এমনি ওরে রাখছেন”। সে ভাবে আমি এই জালিম দুনিয়া ফেস করতে পারবো না, আমি কিছুই পারি না।
৪
একটা সময় মনে হতো আমার পৃথিবীর সব চাইতে বড় শত্রু আমার বাবা, আমার জীবন অতিষ্ট করার জন্য এবং তার জীবনের অসমাপ্ত কাজ গুলো কে আমাকে দিয়ে সমাপ্ত না করে তিনি চুপ হবেন না। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে আমার তত মনে হচ্ছে আমি অকৃতজ্ঞ একটা মানুষ, সে ভুল ছিল কিন্তু তারপরও সে আমার খুব কাছে আসতে চেয়েছিল। খলনায়ক থেকে কখন সে হিরো হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। আজ বাবা দি বসে তাকে কামান দিয়ে স্যালুট দিতে চাচ্ছি।
৫
আজকে সকালে সে ডেকে ছাই দিয়ে ধরছে, ধরে তার অর্জন গুলো কে ডিটেইলে বললো, বলার পর বলে “তোর দিন কাল কেমন যাচ্ছে?”। বলার পর বললাম জব ভালোই যাচ্ছে। আমি কেমন আছি তার চাইতে, আমার জব কেমন যাচ্ছে সেটাই সে জানতে চায়। তার পর সেই চির চেনা প্রশ্ন, বিসিএস তো দিলা না , কি আর করার বিজনেসে বসো, না হয় করো। যথারীতি বিজনেসের জন্য টাকা চাইলাম তারপর অর্জনের গুলোর ভিতর যে সব পয়েন্ট মিস হইছে সেগুলো শুরু করলো আমি কল আসছে এই ভান নিয়ে বের হয়ে গেলাম। পরে আফসোস হলো মানুষটার কথা বলার কেউ নেই তা না হলে আমার ডাকার কথা না। আফসোস।
৬
আজ কে সে তার অফিসে তলব করেছে তাই গেলাম। গিয়ে দেখি একজন কে বলছে “ আপনার মত ব্রিলিয়ান্ট মানুষ, গাধার মত কিভাবে কাজ করে” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে… বসো। “তুমি” দিয়ে শুরু করছে তার মানে গণ্ডগোল। আমি কল ধরার ভান ধরে সেই যে অফিস থেকে বের হইছে এখন পর্যন্ত দেখা হয় নি।
৭
সে খুব ভেঙ্গে পরেছে, ক্যান্সার নাকি শরীরে বাসা বেধেছে। ব্যাথায় আহ ঊ করছে। আমি বললাম মার সাথে ডিসকাস করো। দেখলাম সে পুরো সুস্থ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে “আমার কিছু হয় নি আর শোন তোর মার সাথে ডিসকাশন আমার কখনো হয় নি, যেটা হয়েছে সেটা হলো ঝগড়া।” বুঝলাম কিছুক্ষণ আগে ডিসাকাশন পর্ব গেছে, এই জন্য উত্তেজিত।
৮
একজন বিজনেস ম্যান কখন ভেঙ্গে পরে না, আসলে এটার নাকি অপশন নেই। কিন্তু বাবা আজ কে কল দিয়ে বলে তুই … তুমি কোথায়। “তুই থেকে তুমি”… সম্মান চেঞ্জিং তার মানে ঝামেলা আছে। আমি বললাম আছি। তারপর যেটা বললো মনে হলো হয় আমি বড় হয়ে গেছি আর না হয় আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। বলে তুমি কিছু টাকা দিতে পারবে, আমার কাছে টাকা নেই।
৯
আজকে তার সাথে দেখা করতে আসছি, বাসার গেট দিয়ে ঢুকবার সময় তার চিৎকার শুনেছি সে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। আমাকে দেখে ব্যাথা ভুলে গিয়ে বলে বাংলাদেশে সেচ্ছায় মৃত্যু বরন নেবার সিস্টেম মে বি নাই, তাই না। আমাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেল। আমি লিখে যাচ্ছি আমার আদেশে তুমি এটা করেছো। আমি এই সবে ভেঙ্গে পরি না। বললাম আর একটু ওয়েট করো সময় বলে দিবে। সে একটা শ্বাস নিয়ে বললো ওটার জন্য ভয় করতেছে, আর কত।
১০
আমি বিদেশে একটা চাকরি পেয়েছি, কনফার্ম হবার পর রুমে গিয়ে তাকে জানালাম। সে কিছু বললো না। বাপ বেটার এই সব বিষয়ে এক্সপ্রেশান খুব কম , তা আমি জানি। সে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে কোথায়, বললাম কানাডা। ভালো মন্দ কিছু না বলে, আমাকে সে বলছে “ওখানে আমার অমুক বন্ধুর ছেলে থাকে বিরাট অফিসার, তুমি ওর সাথে কথা বইলো চাকরীর ব্যাপারে”। আমি ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়ে বললাম আমি চাকরী পেয়েছি। সে বলে তারপরও চাকরী যদি লাগে। হতাশ
১১
আমার আজ কে প্রোমোশন হয়েছে, তাকে লেটার দিতে গিয়েছি। প্রথমে লেটার টা হাতে নিয়ে আমার জুতার দিকে তাকিয়ে বলে তুমি বাথরুমের স্যান্ডেল পরে আছো কেন। তারপর ভেবে অবাক করা ভঙ্গিতে বলে, তুমি কি এটা পরে অফিসে যাও। আমি বললাম হ্যাঁ। অবস্থা বেগতিক ভেবে চলে আসছি। লেটার টা তার কাছেই আছে। জানি না সে খুলে দেখছে কিনা।
১২
কেমো দিচ্ছে, কেমোর রিয়েকশনে তার শরীর ঘামছে। আমি উসাইন বোল্ট এর মত অপেক্ষা করছি, কখন চিল্লাবে আর আমি কেমোর স্যালাইনের বাটন বন্ধ করবো। নাহ চিল্লালো না। কিছুক্ষণ পর আমার দিকে তাকিয়ে বলে, এ কিছু না গরম লাগছে তাই ঘামছি। ডাক্তার এসে আমাকে নিয়ে বললো আপনি চিন্তা কইরেন না ওনার মনের জোর ওনাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
১৩
এখন সে আমাকে খুব ভয় পায়, আমি কিছু বললে সে চুপ হয়ে যায়। কি যেন হয়েছে কিছু বলার আগে আমাকে বলে মন দিয়ে শোন উত্তেজিত হবে না। তুই এখন আর এখন বলে না আমার অগাধ বিশ্বাস কিছু দিন পর সে আপনি আপনি শুরু করবে।
১৪
আজকে বাসায় এসে দেখি সে আমার রুম পরিষ্কার করছে। রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছিলাম ঢুকবো কিনা। রুম থেকে বের হতে হতে বলে পিংগেলস এর ডিব্বায় চিপস না খেয়ে এই সব কি খাস। বলে রাখা ভালো ব্যাচলর লাইফে এস্ট্রে কিনার দরকার পরে না।
১৫
আজকে ভার্সিটির রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করেছে, আমি ফার্স্ট সেমিস্টারের রেজাল্ট বলে দিছি। প্রথমে চিন্তায় পরে গিয়ে, পরে “এভাবে লেগে থাক” বলে রুম থেকে চলে গেছে, যাক কিছু দিন নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো।
বাবা নেই বেশি দিন হয় নি, কিন্তু দিন দিন আমাকে আমার ফ্যামিলি ম্যনেজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাবা শুধু টাকা দেয় না, সে একজন ম্যনেজার, যে লোকচোক্ষুর অন্তরালে কিছু ডিসিশান মেইক করে যা দেখা যায় না শুধু বোঝা যায়, যে আর সমস্যা নেই। জানি না কত দিন আমি ফ্যামিলি মেইন্টেইন করতে পারবো, এই মেইন্টেইন করাটাই মনে হচ্ছে কঠিন কাজ।
আমি জানি এই লেখাটা দেখে যাদের বাবা নেই কিংবা বাবা দূরে থাকে তাদের খারাপ লাগবে। যেমন টা এখন আমার লাগে। আমি নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করছি মাত্র। এগুলো কখনই কাউকে বলা হয় নি, নিজের বাবাকেও না।
Have an idea or just want to connect?
RISAT RAJIN © 2025
Designed by me, powered by ✦ Droip