04-23-2022

সত্যজিৎ রায়ের গপ্পো- ডিজাইন রম্য রহস্য।

আজকে “শেষ আলোর” প্ল্যান চ্যাটের আড্ডায় সত্যজিৎ রায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার আজ৩২ তম মৃত্যুবার্ষিকী , এই উপলক্ষে কোটি ফ্যান ফলোয়ারের মনের প্রশ্নের উত্তর তিনি আজ দিবেন। 

কিংবদন্তী সত্যজিৎ , সাদর সম্ভাষণ। আসতে কষ্ট হয় নি তো? আপনি কেমন আছেন এবং আপনার পরিচয় জিজ্জাসা করে সময় নষ্ট করবো না। চলে যাই প্রশ্ন পর্বে।  

১। এখনকার ডিজাইন মার্কেটের আর্তনাদ নিয়ে কিছু বলুন?

সত্যজিৎ রায়ঃ আমার বিশ্বাস ভালো ডিজাইন সৃষ্টি করার জন্য যে ক্ষমতা গুলো প্রয়োজন সেই ক্ষমতা যদি কারো থাকে, তাহলে তাকে ভালো ডিজাইন করতে হবেই। মার্কেটে কাজ নেই কিংবা কোম্পানি গুলো ভালো ডিজাইন করার সুযোগ দিচ্ছে না এগুলো আমি বিশ্বাস করি না। এগুলো অনেকটা অজুহাতের মত। একজন ডিজাইনার যেদিন থেকে মনে মনে কিংবা কাজে ভেবেছে সে ডিজাইনার হবে সেদিন থেকেই সে এক চ্যালেঞ্জের জগতে প্রবেশ করেছে। যেখানে অনেক কিছুই আপনার ভাবনার বিপরীতে থাকবে আর সেই ভাবনার বিপরীতে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে। কেউ আপনাকে বিনামূল্যে প্লেটে সাজিয়ে খাবার দিবে না। আপনাকেই সাজিয়ে নিতে হবে। তাই ডিজাইন মার্কেট বরাবরই শেয়ার মার্কেটের মত ছিল। যারা কাজ পারে তারা বসে নেই, কেউ না কেউ কিছু তো করছে। আর ডিজাইন ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। আপনাকে যদি কোন কিছুর সেইপ গুন এবং তার বৈশিষ্ট্য বুঝাতে হয় সেখানেই তো ডিজাইন এসে পরবে।

২। এখনকার ডিজাইন ইন্ডাস্ট্রি তে AI এর আবির্ভাব এটা কিভাবে দেখেন?

 সত্যজিৎ রায়ঃ জেনারেটিভ জেনারেশনের যে সময় এসেছে সেটা না বললেই নয়। আগে আমরা একটি গল্পের জন্য দেশ বিদেশ ঘুরতাম এখন হয়তো সেটার দরকার পরবে না কিন্তু একটা সিনেমা তো আর AI বানিয়ে দিবে না। কারণ একটা সিনেমাতে অনেক কিছু থাকে। হ্যাঁ এখন যদি আপনি বলেন গল্পকার কিংবা এডিটররা কি করবে? আমার মনে হয় এ দ্বারা তাদের কাজ আরও নিখুঁত হবে। ছোট ছোট কাজ কমে যাবে। তবে পেন্সিল যেদিন নিজ থেকে ছবি আঁকতে পারবে কিংবা একটা ক্যামেরা নিজে থেকেই মুভি বানাতে শুরু করবে, সেদিন আমি বলবো এখন মানুষ্য সৃষ্ট ক্রিয়েটিভিটির অবসান হলো।  

৩। ডিজাইনারদের চাকরীর মার্কেট কি হারাবে? 

সত্যজিৎ রায়ঃ ডিজাইন মার্কেটের অন্যতম দক্ষতা হলো মানুষের মন বোঝা এবং তার সাথে যোগাযোগ করা, এটা করার ক্ষমতা যার আছে সেই থাকবে। AI তো শুধু আপনার মন বুঝবে আপনার মার্কেটের মানুষদের না।

৪। মৃৎ শিল্প কিংবা কাসা শিল্পের মত কি আমাদের কখন বলতে হবে যে ডিজিটাল শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে? 

সত্যজিৎ রায়ঃ তুমি যদি ডিজনির প্রথমের ডিজাইন প্রসেস দেখো এখন কি সেটা আছে। এখনো তো এনিমেশন হচ্ছে। এনিমেশন কিন্তু মরে যায় নি শুধু প্রসেস পরিবর্তন হয়েছে আরও নিখুঁত হয়েছে। এর চাহিদাও বেড়েছে। প্রযুক্তি সব সময় ডমিনেটিং, সব সময় সে সব কিছুতে নাক গলাবে এবং আমরাও গলছি। তুমি চারিদিকে একটু তাকাও তো, সব গুলো মোবাইলের ডিজাইন এক, সাইকেল, গাড়ির ডিজাইন এক এবং কি যত গুলো বাণিজ্যিক এ্যাপ রয়েছে সবার ডিজাইন একি রকম মনে হয়। তোমাদের বাঙলাদেশের মৃত সিটিসেলের স্লোগানের মত একটাই নাম্বার একটাই পরিচয়। এখন যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে বিলুপ্তি সময়ের ব্যাপার। যেকোন ব্যবসা আস্থা দিয়ে চলে, কোন ব্যবসা যদি মনে করে তার ডিজাইন দরকার নেই তাহলে সেখান থেকে ডিজাইন ছিটকে পরবে। মৃৎ শিল্প কিংবা কাসা শিল্পে কোন ইনোভেশন ছিল না, সেই জায়গাটা অন্য কেউ নিয়েছে। তোমাকে প্রতিটা স্টেপে নিজের যোগ্যতা দেখাতে হবে। এটা অবশ্য একজন মানুষের হাতে না একটা মুষ্টিমেয় গোষ্টীর হাতে নির্ভর করে।

৫। “ডিজাইন শুধুই শিল্প, ব্যাবসার খাতিরে নয়” আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন?

সত্যজিৎ রায়ঃ নাহ কিন্তু, আমি এটা বিশ্বাস করি না। প্রোডাক্ট ডিজাইন এমন একটা জিনিস যা ইউজার তার সমস্যার সমাধান কিনছে, এমন না যে আপনার সমস্যার সমাধান আমি ফ্রেমে করে আমার লিভিং রুমে টাঙিয়ে রাখবো বিনোদনের জন্য। তাই সে তখনি আপনার ডিজাইন ইউজ করবে কিংবা কিনবে যখন সে সমস্যার সমধান পাবে। তার মানে এখানে সূক্ষ্ম লেনদেন রয়েছে। আর লেনদেন মানেই ব্যবসা। আপনাকে প্রয়োজনীয় এবং বিনোদনের পার্থক্য বুঝতে হবে। মানুষের কাছে পণ্য মানেই প্রয়োজনীয় জিনিস। তাই এখানে প্রথম যে মুখ্য ব্যপার সেটা হলো সমাধানের বিপরীতে অর্থের লেনদেন। তাই ডিজাইন মানেই ব্যবসা। এখন দেখতে হবে ব্যবসা টা কিভাবে হচ্ছে। 

৬। আপনার কি মনে হয় আমাদের কমতি কোথায়?

সত্যজিৎ রায়ঃ আজকাল দূরদর্শী ডিজাইনাররা ভয়ে ভয়ে ডিজাইন করে। পাবলিক খাবে কিনা, বিজনেস হবে কিনা। হেনরি ফোর্ডের কথা মনে আছে, তিনি বলেছিলেন আমি যদি মানুষ কে প্রশ্ন করি যে তোমার দ্রুত যাতায়াতের জন্য কি লাগবে তারা বলবে আমার দ্রুত গতির ঘোড়া লাগবে। গাড়ি যে তখন দ্রুত গতির বাহন হতে পারে সেটা তো আর মানুষের মাথায় নেই। তার মানে আপনি যদি ডিজাইন করেন “পাবলিক কি খাবে অথবা কি লাগবে” তাহলে আপনি ও সেই মানুষের মতই চিন্তায় লুটপুটী খাবেন। আমি বলছি না সব সময় এটা সত্যি কিন্তু মাঝে মাঝে এটা সত্যি। এখন যে কমতিটা দেখছি সেটা হলো গ্রাহকের চাহিদার সাথে তাল মেলানোটাকেই মুখ্য ধরে নেওয়া। নিজের আইডিয়া কিংবা ইনোভেশন বলে যে কিছু আছে তা তারা ভুলে যাচ্ছে। 

৭। আপনার কি মনে হয় এই কমতি কিভাবে কমবে?

সত্যজিৎ রায়ঃ বাংলাদেশের প্রথমসারির ভিশনারী ডিজাইনাররা যারা ছিল তারা যেভাবে ডিজাইনের লাইনআপ দেখিয়ে গেছে ওটাই ফলো করে চলছে। তার বাইরে গিয়ে যে চিন্তা করা যায় তা এই যুগেকে শিখতে হবে। সব চাইতে বড় বিষয় হলো তারা বুঝতে চাইছে না এটা অনেক গুলো জ্ঞানের সমষ্টি একটা বিষয়, এখানে ভিউজুয়াল আছে, মন কষে সমস্যার সমাধান আছে, বাণিজ্যিক করার মশলা আছে। একটা মান দণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে নেই। কিন্তু যখন কেউ বলে উঠে ইউজারের অভিজ্ঞতাই সব তখন সব দল বেধে ওই দিকে ছুটে, আবার কেউ বলে উঠলো ভিউজুয়াল সব তখন ইউ এক্স বাদ দিয়ে সেদিকে ছোট। তখন মার্কেটে একটা গ্যাপ ক্রিয়েট হয়। তাই তাদের কে বুঝতে হবে এটা একটা ক্যারিয়ার এটা কোন কারখানার বোতল লাগানোর কাজ না। যে তাকে শুধু মনোযোগ দিতে হবে বোতল লাগানোতেই। 

৮। এখনকার কার কাজ আপনার ভালো লাগে?

সত্যজিৎ রায়ঃ এক কালে আমরা এই নিয়ে কথা বলতাম, কার কাজ কেমন , কার স্টাইল কেমন, সে কোন জায়গায় বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এখন আর সেরকম নেই। কেউ তো আর টার কাজ এখন দেখায় না। এখন যেটা হয়েছে কিছু কিছু ডিজাইন ভালো লাগে কিন্তু কোন ডিজাইনার নয়। একই ডিজাইনারের একটা ডিজাইন ভালো লাগলো অন্য ডিজাইন ভালো লাগলো না কাজেই কোন ডিজাইনারকে ভালো লাগে বললে মুশকিলে পরে যাবো। 

৯। নিভু আলোর ডিজাইনারদের জন্য যদি কিছু বলতেন।

সত্যজিৎ রায়ঃ তোমরা যে এই লেখাটা পড়লে কি শিখলে? কিছুই না, এভাবেই তোমরা বাজে লেখা পরে নিজেদের ক্ষমতা নষ্ট করছো। এই লেখাটা তোমার ভবিষ্যতের মতই, মানে অন্ধকার। তাই আলোর পথে যাও। ভালো লেখা পড়ও। 

ধন্যবাদ সত্যজিৎ রায় কে, প্ল্যান চ্যাটের মোমবাতি ফুরিয়ে আসায় এবং আমাদের মোমবাতি কেনার বাজেট না থাকায় এখানে সমাপ্তি টানছি। আপনারা ভালো থাকবেন। 

সত্যজিৎ রায়ঃ এখন আমি ব্যাক করবো কিভাবে? 

সম্পাদকঃ 😅 🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃

Share

Continue reading

Have an idea or just want to connect?

talk@risatrajin.com

RISAT RAJIN © 2025

Designed by me, powered by ✦ Droip