03-16-2025
“মানুষ সমস্যা সমাধানের পাশে সব সময় নতুন একটা সমস্যা রেখে দেয়। জীবনে কোন পাপ করেছিলাম যে ইউএক্সে আসছিলাম” – জনৈক ভাই কে প্রশ্ন করলাম, কেন কি হয়েছে?
আমার প্রশ্নের উত্তরে ভাই বললেন, “মিছামিছি কেইস স্টাডির শেষ অংশে আউটকাম লিখেছিলাম। যে আমি ডিজাইন করার কারনে কোম্পানি মিলিয়ন ডলারের প্রফিট করেছে। এখন জব ইন্টার্ভিউতে প্রশ্ন করেছে, ‘আপনি এটা কিভাবে মেজার করেছেন? কিভাবে বুঝলেন আপনার ডিজাইনের কারণেই হয়েছে, কোম্পানির মার্কেটিং এর কারণেও তো হতে পারে।’ আমি শুধু হা করে তাকিয়ে ছিলাম। কি আর বলবো! মন চাইছে জুমটা অফ করে ছাদ দিয়ে লাফ দেই!”
আমি হেসেছি, না তার ফেইলারের কিংবা আনএথিক্যালের গল্প শুনে না। তার এক্সপ্রেশান দেখে। আজ কে আমি এই বিষয়টা নিয়েই বলার চেষ্টা করবো। এটা কি, কিভাবে মেজার করা যায় এই ব্যাপারটা এবং শুধু পোর্টফোলিও না, আপনি যদি সাচ্চা ডিজাইনার হয়ে থাকেন এটা আপনাকে ভাবাতে শেখাবে, হিসেব রাখতে শেখাবে। কারণ আপনার সাকসেস এবং ফেইলিয়ার এটা দিয়ে মেজার করার একটা উপায়। দিন শেষে অর্থই অনর্থের মুল। যদিও অনেকে আমার সাথে একমত হবে না, আমি বলবো আপনার মত চেঞ্জ করেন মিয়া!
এবার কল্পনা করুন, আপনি একটি ডিজিটাল হেলথ কেয়ার অ্যাপ ডিজাইন করেছেন। অ্যাপটির উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য ডেটা ট্র্যাক করা, ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা এবং স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া। অ্যাপটির ফিচারগুলো অসাধারণ, ডিজাইনও আধুনিক। কিন্তু সমস্যা হলো — অ্যাপটি ব্যবহার করা কিছুটা জটিল যে ব্যবহারকারীরা প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেই হতাশ হয়ে বেরিয়ে যান। এই অবস্থায় মাসিক অ্যাক্টিভ ইউজার: ১,০০০, এই ইউজারের ভিতর প্রিমিয়াম ইউজারের সংখ্যা: ৫% এবং মাসিক আয়: ২০,০০০ টাকা।
এবার আপনি চিন্তা করলেন, নাহ এভাবে আর হচ্ছে না। এটাকে ঠিক করতে হবে। তাহলে কি করবেন? আপনি নিজে হয়তো ইউজারের সাথে ইন্টার্ভিউ কন্ডাক্ট করলেন, কিংবা টুলস ইউজ করলেন, মার্কেট রিসার্চ করার জন্য আর একজন লোক নিলেন। এবং প্রব্লেম যে সত্যি তার ভেলিডেশন করলেন। এবার ধরুন এগুলো করতে গিয়ে খরচ হলো ১০, ০০০ টাকা (হাসবেন না সংখ্যাটা বুঝানোর জন্য)।
এবার সমস্যা গুলো বের হলো। সেগুলো যেমন,
এবার আপনি এই রিসার্চের উপর বেইজ করে এবং আপনার নিজের আইডিয়া দিয়ে একটা ওয়ারফ্রেম করে প্রোটোটাইপ বানিয়ে ইউজেবিলিটি টেস্টি করলেন। এবার সেটা কিভাবে, প্রথমে টেস্ট করলেন, তারপর ইস্যু পেলেন এবং ফিক্স করলেন। আবার টেস্ট করলেন, আবার ইস্যু পেলে সেইম প্রসেসে এগোবেন। এখানে আপনি কিছু টেস্টিং টুলস কিনলেন এবং অন্যান্য কিছু খরচ হলো। এই খরচ টা ১০,০০০ টাকা ধরলাম। মনে রাখেবন যত দূর প্রসেস গড়াবে, তত এটা খরচ বাড়াবে।
এবার সমস্যার একটা সামধানের পর আপডেট অংশটুকুকে ডেভেলপ করলেন। সেখানে ডেভলপমেন্ট ফি গেল ১০,০০০ টাকা।
এরপর যদি কোন ট্রেনিং/ওয়ার্কশপ কিংবা ইমপ্লিমেন্টেশন করার খরচ লাগে তাহলে সেখানে ৫০০০ টাকা এবং অন্যান্য খরচ ধরলাম ৫০০০ টাকা।
এবার আসি সম্পূর্ণ খরচে–
– রিসার্চে ১০,০০০ টাকা
– টেস্টিং ১০,০০০ টাকা
– ডেভালপমেন্ট ১০,০০০ টাকা
– ট্রেনিং এবং অন্যান্য খরচ ৫,০০০ + ৫,০০০ = ১০,০০০ টাকা।
টোটাল ৪০,০০০ টাকার খরচ হলো।
মার্কেটে প্রোডাক্ট টি ইনেশিয়াল ভার্শন রিলিজ করলেন। এর পর মিনিমাম ১ মাস পর গিয়ে আপনি দেখতে পারলেন ইউজার কিছুটা বেড়েছে এবং ইউজার আপনার সেবা কিনতে শুরু করেছে। কিন্তু কত? আপনি যে অর্থ ইনভেস্ট করেছেন সেটা কি যথার্থ কিনা। এখানেই এবার আসে UX ROI.
ইউএক্স ROI (ইউজার এক্সপেরিয়েন্স রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট) হল একটি মেট্রিক যা দেখায় যে, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX) উন্নত করার জন্য করা বিনিয়োগ কি লাভজনক ছিল কিনা। এটি শুধু ইউজারের এক্সপেরিয়েন্স নয়, বরং ব্যবসার আয়, খরচ কমানো এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উপরও ফোকাস করে। ইউএক্স ROI বোঝার জন্য আপনাকে জানতে হবে কিভাবে এটি কাজ করে এবং এর সাথে জড়িত খরচগুলো কী কী।
এটার সূত্র হলো–
গুরু চ্যাট জিপিটির ভাষ্য মতে,
“ধারণাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম প্রতিষ্ঠিত এবং জনপ্রিয় করা হয় ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে। Don Norman, Jakob Nielsen, এবং Forrester Research Company UX ROI-এর ধারণার প্রথম প্রবর্তক এবং এর মূল প্রচারক। তাদের কাজ প্রমাণ করেছে যে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিলে ব্যবসার আর্থিক মুনাফা বৃদ্ধি পায়।বর্তমানে এটি একটি মূলধারার ধারণা, যা ডিজিটাল প্রোডাক্ট এবং সেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরে গুগল তাদের ডিজাইন স্প্রিন্ট মেথডোলজির মাধ্যমে UX উন্নয়নের দ্রুত ফলাফল দেখানোর একটি কাঠামো তৈরি করে এবং IDEO তাদের HCD পদ্ধতিতে UX ROI ধারণার আরও গভীরতর উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।”
আপনি যে ইউজারের এক্সপেরিয়েন্স উন্নতির জন্য কাজ করেছেন সেটার লাভ ক্ষতির হিসাব নিকাশ করাই এর মুল উদ্দেশ্য। এটার মাধ্যমে আপনি একটি ডিসিশানে আসতে পারবেন যে আপনার পরবর্তীতে ইনভেস্ট করা উচিত হবে কিনা কিংবা আপনি ভুল জায়গায় ইনভেস্ট করছেন। এ ছাড়াও বিজনেসের লাভ ক্ষতির হিসেবে আপনি কত টাকা UX উন্নতির জন্য ইনভেস্ট করেছেন সেটার হিসেব রাখাও খুব দরকার।
এই পর্বে আমাদের শুরুতে যে খরচের হিসেব করেছিলাম, সেটা কে সূত্রে ফেলে দেখবো, আমাদের অবস্থান কোথায়? তবে তার আগে আমাদেরকে একটা সময় ধরে নিতে হবে যে আমরা কত মাসের ডেটা নিবো। আমরা রিলিজের ১ মাস এবং ৩ মাস পর কি হয়েছে সেটা দেখি।
১মাস মেয়াদ
আমাদের ইউএক্স উন্নত করার খরচ ছিল ৪০,০০০ টাকা
UX উন্নত করার আগে মাসিক আয় ছিল ২০০০০ টাকা
UX উন্নত করার পর মাসিক আয় ৩০,০০০ টাকা
এখন আমাদের “UX উন্নত করার পর লাভ” টি বের করে নিতে হবে। সেটা হলো–
UX উন্নত করার পর মাসিক আয় – UX উন্নত করার আগে মাসিক আয় = UX উন্নত করার পর লাভ (৩০,০০০- ২০,০০০ = ১০,০০০ টাকা) আমাদের UX উন্নত করার লাভ হলো ১০,০০০ টাকা।
সূত্র ছিল
এবার এই সূত্রে সংখ্যা গুলো ফেলে দেখি–
ফলাফল
ইউএক্স উন্নতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ROI হলো -৭৫%। এর অর্থ হলো, আপনি ইউএক্স উন্নতির জন্য প্রতি ১০০ টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে ৭৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এবার আমারা ৩ মাসের হিসেব করি সেইম এমাউন্ট দিয়ে।
৩ মাস মেয়াদ
আমাদের ইউএক্স উন্নত করার খরচ ছিল ৪০,০০০ টাকা
UX উন্নত করার আগে মাসিক আয় ছিল ২০০০০ টাকা
UX উন্নত করার পর মাসিক আয় ৩০,০০০ টাকা
UX ইউএক্স উন্নতির আগে ৩ মাসের মোট আয়: ২০,০০০×৩(মাস) = ৬০,০০০ টাকা
UX ইউএক্স উন্নতির পরে ৩ মাসের মোট আয়: ৩০,০০০×৩(মাস) = ৯০,০০০ টাকা
এবার উন্নত করার পর মাসিক আয় – উন্নত করার আগে মাসিক আয় = UX উন্নত করার পর লাভ (৯০,০০০- ৬০০০০ = ৩০,০০০ টাকা) আমাদের UX উন্নত করার লাভ হলো ৩০,০০০ টাকা
এবার ৩ মাসের জন্য সূত্রতে ফেলে দেখি–
ফলাফল
ইউএক্স উন্নতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ROI হলো -২৫%। এর অর্থ হলো, আপনি ইউএক্স উন্নতির জন্য ৩ মাসে প্রতি ১০০ টাকার বিনিয়োগে ২৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এবার আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার ইউএক্স উন্নতির পর এর গ্রোথ রেইট আছে কিনা। যেমন ৩ মাসের মেয়াদে আপনার ব্যবসার গ্রোথ রেট হলো ৫০%। এর অর্থ হলো, ইউএক্স উন্নতির মাধ্যমে আপনার ব্যবসার আয় ৩ মাসে ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখানে একটু কিন্তু আছে! যদি ইউএক্স উন্নত করার খরচ একবারেই করা হয়, তাহলে সূত্র হিসেবে শুধু এমাউন্ট বসালেই হবে। কিন্তু খরচ যদি প্রতিমাসে হয় তাহলে যে কয় মাসের হিসেব করতে চান সেই মাসের সংখ্যা দিয়ে গুন দিয়ে টোটাল এমাউন্টটা বসাতে হবে।
যেমন আমরা হিসেব করেছিলাম–
ইউএক্স উন্নতির আগে ৩ মাসের মোট আয়: ২০,০০০×৩(মাস)= ৬০,০০০ টাকা
ইউএক্স উন্নতির পরে ৩ মাসের মোট আয়: ৩০,০০০×৩ (মাস)= ৯০,০০০ টাকা
আমরা তিনটা টার্মে সময় নির্ধারণ করতে পারি। শর্ট-টার্ম (১-৩ মাস) , মিডিয়াম-টার্ম (৩-৬ মাস) এবং লং-টার্ম (৬ মাস -১ বছর)। তবে এটা নির্ধারণ করে অনেকগুলো প্যারামিটারের উপর। যেমন, আপনার ইউজার/কাস্টমার কারা, বিজনেসের মডেল কী, প্রাইসিং মডেল কেমন, কোন ইন্ডাস্ট্রির জন্য, ইত্যাদি।
তবে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো, আমরা ৬-৮ মাস অন্তর অন্তর এই হিসেব করে থাকি। কারণ আমাদের বাৎসরিক বাজেট দিতে হয় এবং আমাদের গ্রোথ রেইট ঠিক আছে কিনা সেটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে হয়। তবে এটা এক একটা কোম্পানির এবং লিডারশিপ লেভেলের প্লান অথবা ডিসিশান মেকিং এর উপর নির্ভর করে।
আমার UX ROI পরিমাপের ক্ষেত্রে মাত্র ১টি কোম্পানির অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং সেখানে ক্রস-ফাংশনাল টিম কাজ করে। তাই সেই সূত্র ধরে আমি বলবো ক্রস-ফাংশনাল টিমে এটা বেশি ব্যবহার করা হয়। ফ্রিল্যান্স অথবা অন্য কোন কোম্পানি কী করে আমার আওতার বাইরে। তবে সব সময় যে UX টিম করে সেটা দেখি নি। প্রোডাক্ট ম্যানেজার, স্ট্র্যাটেজিক টিম বা সিনিয়র ম্যানেজমেন্টদেরকেও করতে দেখছি।
সব কিছুর খারাপ এবং ভালো দিক রয়েছে। তবে এটা বলতেই হবে যে, কোন একটি সমস্যা সমাধান করার জন্য আপনি কত ইনভেস্ট করছেন এবং ভবিষ্যতে কত করেবেন কিংবা করবেন না এই ডিসিশান নেবার জন্য এর গুরুত্ব অনেক। আমি কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলি। এটা নিয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে। তাই মত দিন, বিরোধ নয়।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখে যদি আপনি এগিয়ে যান, আমি নিশ্চিত সাফল্যের দরজা খুলবে আপনার জন্য। সাফল্য মাপার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি থাকা খুব জরুরি। তা না হলে হয়তো নিজের কেইস স্টাডিতে মনগড়া নাম্বার বসাতে হবে, আর ইন্টারভিউতে বোকার মতো চুপ করে থাকতে হবে।
আমি জানি, বাংলাদেশের মার্কেটে যেখানে UX Maturity নিয়েই লড়াই করতে হয়, সেখানে এই ধরনের ক্যাল্কুলেশন বিলাসিতা মনে হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, আপনার কোম্পানি যদি এটি গুরুত্ব না-ও দেয়, পুরো বিশ্ব কিন্তু এটাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। আর একটা কথা ROI নিয়ে মনগড়া হিসাব না করাই ভালো।
শেষ কথায় বলতে চাই, চ্যালেঞ্জগুলোকে জয় করার সাহস নিন। এতে শুধু সাফল্যের চাবিকাঠিই না, তালাটাও আপনার হাতে থাকবে। এখনো সময় আছে—আলোর পথে আসুন, চ্যালেঞ্জকে বলুন, ‘আস্তা লা ভিস্তা বেইবি’, আর সাফল্যকে বলুন, ‘কি মামা কি অবস্থা, চলো চা খাই’!
মার্কেটে অনেক ROI আছে যেমন Usability ROI, Brand ROI, Sustainable Design ROI, Accessibility ROI ইত্যাদি। আশা করি নিজে নিজে এগুলো ঘেঁটে একটু শিখে নিতে পারবেন। আর যদি না পারেন, ভাই ব্রাদার তো আছেই। অথবা UX bangladesh Facebook Group এ জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
এই লেখাটি লেখার জন্য ডেটা এবং মোটিভেশন পেয়েছি Nielsen Norman Group (2023). “Measuring ROI for UX“ এবং সাদ ইকবাল ভাইকে প্রুফ রিডিং করার জন্য ধন্যবাদ।
Have an idea or just want to connect?
RISAT RAJIN © 2025
Designed by me, powered by ✦ Droip